প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নিজস্ব সংবাদদাতা:মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর নির্মিত চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার সংযোগস্থল ‘মতলব সেতু’র মাঝখানে জয়েন্টে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। গত ২১ নভেম্বর সারাদেশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি মতলব সেতুটিও ক্ষতির কবলে পড়েছে বলে ধারণা করেছেন স্থানীয়রা। সেতুর দুপাশের রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নিচের মাটি-বালু সরে গিয়ে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।
সেতুর কোথাও উঠে গেছে কংক্রিট, বেড়িয়ে পড়ছে রড। প্রতিদিন চলাচল করছে ছোট-বড় হাজার হাজার যানবাহন। চালকসহ যাত্রীরা আছে আতঙ্কে। সেতু পারাপার হচ্ছে উৎকণ্ঠার মধ্যে। সেতুটি বর্তমানে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় ঘটতে পারে বড় বিপদ। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর মাঝখানের জয়েন্টে ফাটল। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি কম্পন সৃষ্টি হয়। সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে হয়েছে বড় গর্ত। গর্ত যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
সংস্কারসহ দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলা নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও কুমিল্লার লাখো মানুষ ঢাকায় নিয়মিত যোগাযোগের জন্য এ সেতু ব্যবহার করেন। প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন এই সেতু দিয়ে চলাচল করে। সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়লে বিকল্প সড়ক না থাকায় জনভোগান্তির সৃষ্টি হবে। জানা যায়, মতলব উত্তর ও দক্ষিণের সরাসরি যোগাযোগ এবং চাঁদপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে প্রায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
সেতু নির্মাণে ৮৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল সেতুর ব্যয় ৫৬ কোটি টাকা ও জমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ২৮ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আরও ৮ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর মতলব বাজারের পূর্বপাশে সেতুটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। সেতুতে ১০.২৫ মিটার প্রস্থের ৭টি স্প্যান রয়েছে এবং দুপাশের অ্যাপ্রোচ সড়কটি ১.৮৬ কিলোমিটার। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কাজ শুরু হয়ে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২০১৭ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ করার কথা ছিল।
তবে পরে নির্মাণ ও অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হয় এবং সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।স্থানীয় বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন,গত ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে সেতুর মাঝ দিয়ে ফাটল দেখা দিছে, সম্ভবত ভূমিকম্পের পূর্বে এরকম ছিল না। সেতু পরিদর্শন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানাই। আরেক বাসিন্দা নাজমুল হোসেন বলেন, “জরুরি সেবা, শিক্ষার্থী, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ সাধারণ ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে প্রতিদিন। পথচারী কামরুল হাসান বলেন,সেতুর উত্তর পাশের রাস্তার বেহাল দশা।
এই রাস্তাটি পুরোপুরি ভেঙে গেলে সেতু থেকেও কোনো লাভ নাই। অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা ও দৈনন্দিন জীবনে পড়বে নেতিবাচক প্রভাব। গাড়ি চালক আশরাফ আলী বলেন,এত অল্প সময়ের মধ্যে ব্রিজটি ফাইটা গেছে। ব্রিজে উঠার রাস্তাও অনেক খারাপ। মেরামত করা জরুরি।কলেজ শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, “সেতুর অবস্থা খুবই ভয়ংকর। আমরা জানি না কখন কী ঘটে। তারপরও জীবন হাতে নিয়ে প্রতিদিন পার হতে হচ্ছে।স্থানীয় সবুজ বেপারী বলেন,সেতুর মাঝখানে ফাটল এবং দুপাশের সংযোগ সড়ক ভেঙে বড় গর্ত হয়েছে।
মানুষের জীবন ও গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থা রক্ষায় অবিলম্বে সেতুটি মেরামত করা এখন সময়ের দাবি।স্কুল শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন,প্রতিদিন আমি এই সেতু দিয়ে আসা যাওয়া করি। কোনো ভারী গাড়ি পারাপার হলে কাঁপতে থাকে। ঝুঁকি নিয়েই এই সেতু দিয়ে চলছে লাখো মানুষ।ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান গোলাম নবী খোকন বলেন, এই সেতু বন্ধ হলে আমাদের ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় যাতায়াত পুরোপুরি ভেঙে পড়বে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
সেতুর দুপাশের সড়ক এবং মাঝখানের ফাটল সংস্কার করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।মতলব দক্ষিণ উপজেলার ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বাবু বলেন, এই মতলব সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ এই সেতুটি ব্যবহার করে। সেতুর দুপাশের রাস্তার বেহাল দশা। সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত সংস্কার করার জন্য জোরালো দাবি জানাচ্ছি।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন,জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটি সংস্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত জানানো হবে।চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহ. আলিউল হোসেন বলেন,মতলব সেতুর জয়েন্টে ফাটল এবং সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে এরকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।





