প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জেলা প্রতিনিধি: নরসিংদী জেলার তিনটি উপজেলায় সংঘটিত শক্তিশালী ভূমিকম্পে পিতা–পুত্রসহ মোট ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী ও ঘোড়াশাল মধ্যবর্তী অঞ্চলকে কেন্দ্র করে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয় বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন— নরসিংদী শহরতলীর গাবতলী এলাকার হোসেন (৩৭) ও তার শিশু পুত্র ওমর ফারুক (১০), পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামের কাজম আলী ভূইয়া (৭০), ডাঙ্গা গ্রামের নাসির উদ্দিন (৫০) এবং শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আসকিতলা গ্রামের ফুরকান মিয়া (৪০)। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গাবতলী এলাকার একটি নির্মাণাধীন সাততলা ভবনের ছাদ থেকে ইট পড়ে দেলোয়ার হোসেন, তার পুত্র ওমর ফারুক এবং শিশু তাসফিয়া মারাত্মকভাবে আহত হয়।
পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর দেলোয়ার ও তার ছেলে ওমর ফারুকের মৃত্যু হয়। দেলোয়ারের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার উত্তরপাড়া গ্রামে হলেও তারা নরসিংদীর গাবতলী এলাকায় ভাড়া থাকতেন। বিষয়টি নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ এমদাদুল হক নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে, পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামে ভূমিকম্পের সময় একটি মাটির ঘরের দেয়াল ভেঙে পড়ে কাজম আলী ভূইয়া নামে এক বৃদ্ধ ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
একই উপজেলার ডাঙ্গা গ্রামে ভূমিকম্পে আতঙ্কিত হয়ে হৃদ্যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় নাসির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির। এ দুটি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পলাশ থানার ওসি মো. মনির হোসেন। শিবপুর উপজেলার আসকিতলা গ্রামে ভূমিকম্পের সময় ফুরকান মিয়া গাছে উঠে ডাল কাটছিলেন। দোলায়মান অবস্থায় তিনি গাছ থেকে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বিষয়টি শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ফারজানা ইয়াসমিন নিশ্চিত করেছেন। নরসিংদী সদর হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দেড় শতাধিক আহত ব্যক্তি চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ভূমিকম্পে জেলার প্রায় সব উপজেলায় ছোট–বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। নরসিংদী শহরের বিভিন্ন ভবন এবং ঘোড়াশাল বাজার এলাকার বহু স্থাপনায় ফাটল ধরেছে। বিশেষ করে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার নতুনবাজার গ্রামের ইশাক মিয়ার বাড়ি ভেঙে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।
ভূমিকম্পের তীব্রতায় ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডও ঘটে। এতে সাবস্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ পুড়ে গিয়ে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়। পলাশ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আব্দুস শহীদ জানান, ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত কাজ শুরু করে প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। নরসিংদীর সিভিল সার্জন ড. সৈয়দ মো. আমিরুল হক শামীম জানান, ভূমিকম্পে কমবেশি অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাদের নরসিংদী জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু তাহের মোহাম্মদ সামসুজ্জামান চারজনের মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
তবে দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান। আহতদের মধ্যে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ৫৭ জন এবং জেলা হাসপাতালে ১৩ জন ভর্তি আছেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন— সাইফুল (৩৬), মেহেরউন (২০), আবির (৬), নাসরিন (৩৭), ইয়ামিন (২২), মিথিলা (২০), তাসপিয়া (১৮), শামীম (২০), রাকিব (২৪), আতিকুর (৭), তামিম (৬), হনুফা (৪০), বিল্লাল (৫০), জাকির (৩৫), মান্নান (১৬), ইমানুল (১৯), হিরা (৫), মাধবী (৫০), সাইদুর রহমান (১০), হালিমা (৪৫), রফিক (৩ মাস), সুমাইয়া (২০), সূরভী (২০), জিহাদ (১৬), সাথী (২২), সোহেল (২২), মিনা (২৮), শাহাদাত (৩৫) প্রমুখ। স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ ক্ষয়ক্ষতি চিহ্নিতকরণ এবং সহায়তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।





