কমলা চাষ করায় বাবার বকুনি খাওয়া হাবিবুরের সাফল্যে

0
কমলা চাষ করায় বাবার বকুনি খাওয়া হাবিবুরের সাফল্যে

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জিয়াউর রহমান জিয়া,মহেশপুর (ঝিনাইদহ) থেকে ঃ বাবার কথা অমান্য করে ৪ বছর আগের দিকে শুধুই কৌতহল ও আগ্রহ থেকে ইউটিউব দেখে ৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের কমলা চাষ করেন হাবিবুর। কমলা চাষে বাবার বকুনিতে রাগ করে তিন দিন  পর্যন্ত বাড়িতে ভাত খাননি তিনি। তার পরও হাল ছাড়েননি হাবিবুর আত্নবিশ্বস আর কঠোর পরিশ্রমে অবশেষে পেয়েছেন সফলতা।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বেগমপুর গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়ে সারি সারি কমলার বাগান। দূর থেকেই টের পাওয়া যায় পাকা কমলার মিষ্টি গন্ধ। শুধুই  কৌতূহল ও আগ্রহ থেকে ইউটিউব দেখে শুরু করেছিলেন বিদেশি ফল চাষের এক নতুন অধ্যায়। আজ  সেই আগ্রহই তাকে এনে দিয়েছে বাড়তি আয়ের নতুন এক সম্ভাবনা। হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, কমলা চাষে তার যাত্রাটা খুব একটা সহজ ছিল না। তিনি বলেন, ইউটিউবে দেখলাম দেশে-বিদেশে অনেকেই কমলা চাষ করছে।

ভাবলাম আমিও চেষ্টা করে দেখি। এরপরই সাহস নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে চায়না জাতের কমলার চারা রোপণ করেন। এতে করে প্রতিবেশিদের কটু কথা আর বাবার বকুনি খেতে হয়েছে। রাগ করে বাড়িতে তিন দিন পর্যন্ত ভাত খাইনি । তারপরও হাল ছাড়িনি।শুরুর বছরগুলোতে পরিচর্যা, সার পানি ও রোগবালাই নিয়েই দুশ্চিন্তায় ছিলাম বেশি। ধীরে ধীরে চারাগুলো বড় হলো, ঝোপালো হলো, আর তিন বছরের মাথায় দেখা দিল প্রথম ফুল ফল।এ বছর বাগানের দৃশ্যটাই আলাদা।

প্রতিটি গাছে সবুজ পাতার ফাকে ফাকে ঝুলছে থোকায় থোকায় হলুদ কমলা। কোথাও কাঁচা, কোথাও আধাপাকা, আর কোথাও পুরোপুরি রঙ ধরেছে। বাগান জুড়ে যেন উৎসবের আমেজ। হাবিবুর জানান, আমার বাগানের প্রতিটা গাছে তিন থেকে পাঁচ মণ করে কমলা হয়েছে। খরচ  হয়েছে পাঁচ লাখ টাকার মতো। আশা করছি এবার প্রায় ২৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করতে পারব। কমলার বাজারও বেশ জমজমাট। প্রতিদিন মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, যশোর, চুয়অডাঙ্গা, এমনকি দূর জেলা থেকে মানুষ আসছেন  বাগানটি দেখতে।

কেউ ফল কিনে নিচ্ছেন, কেউ ছবি তুলছেন, আবার কেউ পরামর্শ নিচ্ছেন  নিজেরাও কমলা চাষ শুরু করবেন বলে।বাগানের কর্মচাকারী সোহাগ বলেন, আমি এই কমলা বাগানে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত থাকি এবং দেখা শোনা করি। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে কেউ কমলা কিন্তে কেউবা বাগান দেখতে। দামুরহুদা থেকে কমলা কিন্তে আসা ব্যবসায়ী সমরেশ বলেন,ব্যবসা জীবনে অনেক জায়গা থেকে কমলা কিনেছি তবে এই কমলাটা অন্য কমলার চেয়ে বেশি মিষ্টি ও সুসাদু।দর্শনার্থী মইন উদ্দিন বলেন, লোকমুখে শুনে কোটচাদপুর থেকে কমলা বাগান দেখতে এসেছি।

আসলেই এই কমলা মিষ্টি ও সুসাদু যা অন্য কমলার চাইতে ভিন্ন।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে হাবিবুর বলেন, তিনি আরও জমি নিয়ে বাগান বড় করতে চান। পাশাপাশি কমলা সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য একটি আধুনিক গুদাম ও প্যাকহাউস নির্মাণের ইচ্ছাও আছে তার। মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা জানান, মহেশপুর অঞ্চলের মাটি সব ধরনের ফলচাষের জন্য উপযোগী। কমলা, মাল্টা ও লেবুজাতীয় ফসলে এখানে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা  অনেক বেশি। হাবিবুরের বাগানটি আমাদের জন্যও একটা সফলতার উদাহরণ। মাটি ও আবহাওয়া কমলা চাষের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় ফলনও ভালো হচ্ছে।

রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক পরিচর্যার সব ধরনের পরামর্শ আমরা তাদের দিয়ে যাচ্ছি।মহেশপুরের এই কমলা বাগান শুধু একজন কৃষকের সফলতা নয় এটি বদলে দিতে পারে পুরো অঞ্চলের কৃষিবৈচিত্র্য ও আর্থিক চিত্র। চার বছর আগের ইউটিউব ভিডিওতে জন্ম নেওয়া এক কৌতূহল আজ বাস্তব রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি করা এক বাণিজ্যিক বাগান। কমলার সুবাস এখন বেগমপুর গ্রামের নতুন পরিচয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here