প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জেলা সংবাদদাতা: প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মেয়েদের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আজ রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজে প্রায় ১২০০ মেয়ে শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে “মেয়েদের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং বিষয়ক” সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুল জান্নাত।বিশেষ অতিথি ছিলেন সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নাজমুন নাহার, মুন্সিগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী অফিসার নাজমা নাহার, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মারুফা আক্তার, আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক শামীমা নাসরিন, স্কয়ার হসপিটালের আএএমও ডা. সিনথিয়া খানম অর্নি।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুন্সীগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব ফাতেমা তুল জান্নাত। তিনি বলেন, “আত্মমর্যাদা ও আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন মেয়েদের জন্য অনেক বড় বিষয়। এজন্য পরিকল্পনা করে ক্যারিয়ার গঠন করা জরুরি। ক্যারিয়ার গঠন করতে পারলে অনেক ক্ষেত্রেই পিছুটান থাকবে না। ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে সবার আগে সময়ের গুরুত্ব দিতে হবে। এখন সময় নষ্ট করলে ভবিষ্যতে এটার কষ্ট তোমাকে পেতে হবে। তাই সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। আনন্দের পেছনের ছুটার সময় নয় বরং পরিশ্রম করতে থাকো। ভবিষ্যতে আনন্দ তোমার পেছনে ছুটবে।
বক্তব্যে তিনি মেয়ে শিক্ষার্থীদেরকে তাঁর জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন। সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নাজমুন নাহার বলেন, “আমাদের অধিকাংশ মেয়েরা বিভিন্ন কারণে পড়াশুনার বিষয়ে সচেতন নন। তারা একটা পর্যায়ে গিয়ে হয় পারিবারিক কারণে না হয় নিজের কারণে পড়াশুনা থেকে ছিটকে পড়েন৷ অল্প কিছু সংখ্যক হয়তো উপরে উঠতে পারেন। যারা উপরে উঠতে পারেন কিংবা সফল হন তারাও অনেক বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়েন।
সেমিনারে আগত অতিথিবৃন্দের মধ্যে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় সহকারী অধ্যাপক মারুফা আক্তার বলেন, “আমাদের মেয়েদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে যাওয়ার সাহস পায় না। ভবিষ্যতে আত্মমর্যাদা ও আত্মনির্ভরশীলতার জায়গায় যেতে হলে তাদেরকে স্বপ্ন ঠিক রেখে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিবন্ধকতা ও বাধা বিপত্তিকে জয় করতে হবে। তবেই নিজেকে যোগ্য স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক শামীমা নাসরিন তার বক্তব্যে বলেন, আমরা ছোট বেলায় এরকম প্রোগ্রাম পাইনি।
আমাদেরকে উৎসাহ যোগানোর মত কেউ ছিল না। আজ তোমাদের জন্য অপার সুযোগ যে, তোমরা এই মঞ্চে এতজন সফল নারীকে দেখতে পাচ্ছো। তাদের জীবনে এই পর্যায়ে আসা কখনোই সহজ ছিল না। প্রত্যেকেই প্রতিবন্ধকতা জয় করে আজকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি নেতৃত্বও দিচ্ছেন। আমাদের জেলা প্রশাসক এর জলন্ত উদাহরণ। তোমরা ওনাকে দেখেও নিজের জীবন নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারো’।
ডা. সিনথিয়া খানম অর্নি বলেন, “আমি এই প্রতিষ্ঠান থেকেই পড়াশুনা করেছি। আমার তীব্র ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবো। অনেক কষ্ট করেছি৷ কিন্তু আমি সফল হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করছি। এ জন্য আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমি সবাইকেই বলবো পরিশ্রমের পাশাপাশি আল্লাহর উপর আস্থা রাখতে।সেমিনারের সভাপতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ও অধ্যক্ষ, প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের মেয়েদের যথেষ্ট মেধা আছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় মেয়েরা অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ও বিসিএস পরীক্ষাতেও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো করছে। অনেক মেয়ে তাদের চেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে ডাক্তার, ব্যারিস্টার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকসহ মর্যাদাশীল বহু পেশায় ক্যারিয়ারের সুযোগ করে নিচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের অধিকাংশ মেয়েরা মেধা ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পারিবারিক সাপোর্ট সঠিকভাবে পায় না। কেউ কেউ নিজের ভুলের কারণে পথ হারিয়ে ফেলে।
আজকের এই ক্যারিয়ার বিষয়ক প্রোগ্রাম থেকে আমাদের মেয়েরা যে অনুপ্রেরণা পেয়েছে আশা করি সেটি তাদেরকে ক্যারিয়ার গঠনে সত্যিকার অর্থেই সাহায্য করবে। সেমিনারে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা অত্যন্ত গঠনমূলক ও চমৎকারভাবে মেয়েদের ক্ল্যাসের প্ল্যানিং বিষয়ক আলোচনা করে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। সেমিনারে প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ১০০০ শিক্ষা এবং এভিজেএম স্কুলের দুই শতাধিক মেয়ে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, “নিঃসন্দেহে এটি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগে। এর মাধ্যমে আমাদের অনেক ভুল ধারণা দূর হয়েছে৷ আমরা আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। আমরা যদি সচেতন হতে পারি এবং পরিবারের সহায়তা পাই তাহলে আমাদের মধ্যে অনেক মেয়ে খুব ভালো পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমাদের মেয়েরা যে এখন চেষ্টা করলেই ক্যারিয়ারে অনেক ভালো করতে পারে তার অসংখ্য উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে।
” সেমিনারে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা ইয়াজউদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষকে এমন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।





