প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ দীর্ঘ দিন ধরে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ক্রমশ জরাজীর্ণ হওয়ায় ৪টি কক্ষের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে শ্রেণিকক্ষ সংকটের ফলে পাশ্ববর্তী একটি মন্দিরে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ ঝারেন অভিভাবক সহ সংশ্লিষ্টরা।
ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল দুটি হলো- ২৭নং লক্ষীনারায়ণ বালিকা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৬ নং লক্ষীনারায়ণ বালক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুল দুটির কার্যক্রম একটি ভবনে চলছে। জানা গেছে, ১৯৩৭ সালে স্কুল দুটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দুতলা একটি ভবনের ৭টি শ্রেণিকক্ষে প্রায় ৭শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতো। এদের জন্য দুই শিফটে ১৪ জন শিক্ষক রয়েছে। তবে ২০১৫ সালের ভূমিকম্পে স্কুলের দ্বিতীয় তলার দুটি কক্ষে ফাটল দেখা দেয় ও পলেস্তারা খসে পড়ে। এতে ভবনের দুটি কক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।
পরে ২০১৮ সালে ফের ভূমিকম্পে আরও দুটি শ্রেণিকক্ষে ফাটল দেখা দেয়। ভবনের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা খসে পড়ে। সিঁড়ি কোঠার পলেস্তারা খসে পড়ে। বৃষ্টি হলে ছাদ বেয়ে পানি পড়তো। এক পর্যায়ে দ্বিতীয় তলার ছাদ ধসে পড়ার আশঙ্কায় বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। এতে ভবনের ৪টি শ্রেণিকক্ষ পাঠদানের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। ফলে শ্রেণিকক্ষ সংকটে ২০২৩ সাল থেকে পাশ্ববর্তী লক্ষীনারায়ণ জিউর মন্দিরের ভেতরে দুটি কক্ষে বিদ্যালয়ের আংশিক পাঠদান কার্যক্রম চলছে।
আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল ভবনের নিচ তলার দুটি কক্ষে পাঠদানের কাজ চলছে। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা ও দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দুই শিফটে স্কুল ভবনে ও মন্দিরে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। সরেজমিনে ঘুরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মন্দিরের পাঠদানের দৃশ্য দেখা গেছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী উর্মি দাস বলেন, স্কুল ভবন কখন ভেঙে পড়বে এই ভয়ে থাকি। এই ভয়ে আমরা স্কুলে খেলাধুলা করতে পারিনা আনন্দ করতে পারিনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পড়াশোনায় মন বসে না।
শিক্ষার্থী নিলয় চক্রবর্তী বলেন, আমাদের স্কুলের ছাদ ফেটে ও ভেঙে গেছে। ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ছাদের অংশ বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে স্কুলের কক্ষে ক্লাস করতে ভয় পাই। তাছাড়া স্কুল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার ফলে অনেকগুলো কক্ষ বন্ধ রাখা হয়েছে। তাই বন্ধ করে রাখা কক্ষের ক্লাসগুলো মন্দিরে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে অভিভাবক উদিতা রাণী বলেন, স্কুলের ছাদ ও সিড়ি ভেঙে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এগুলো কোন সময় আমাদের সন্তানদের উপরে পড়বে কে জানে।
এ নিয়ে সব সময় ভয়ে থাকি। এর মধ্যে শ্রেণিকক্ষ সংকটের ফলে মন্দিরে গিয়ে বাচ্চাদের ক্লাস করতে হয়। ফলে আমাদের দাবি, স্কুলটা খুব দ্রুত মেরামত করা হোক।অভিভাবক রাকিব সাহা বলেন, সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে বাড়িতে নিশ্চিন্তে থাকতে পারিনা। সব সময় আতঙ্কে থাকি, কখন জানি কি হয়ে যায়। এই ভবনে যে কোন মুহূর্তে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেই দায় কে নেবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
মন্দিরের ভেতরে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে লক্ষীনারায়ণ মন্দিরের পুরোহিত দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মন্দির ভবনের দুটি কক্ষ ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দীর্ঘ ২ বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও স্কুল ভবনটির সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়নি। তাছাড়া মন্দিরের পূজা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় নানা সমস্যা হয়।
এ বিষয়ে ২৬ নং লক্ষীনারায়ণ বালক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপসী সাহা বলেন, ভাঙা ও জরাজীর্ণ ভবনের কারণে আমাদের ছাত্র সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। নিরাপত্তার বিষয়কে প্রধান্য দিয়ে অভিভাবকরা অন্যত্র তাদের সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা অতিদ্রুত নতুন ভবন চাই। কল্যাণ কমিটির সভাপতি দিদার খন্দকার বলেন, খুব ঝুঁকিপূর্ণ ও নাজুক অবস্থায় ছেলে-মেয়েরা এখানে পড়াশোনা করছে।
বিগত কমিটির লোকজন এ বিষয়ে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে এবার আমি কমিটিতে আসার পরে শিক্ষা অফিসার থেকে শুরু করে বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছি। তবে স্কুলের জায়গা নিয়ে একটি মামলা ছিল। দীর্ঘদিন আইনী লড়াই করে সেই মামলায় জয়ী হয়েছেন। আশা করি, খুব শিঘ্রই ভালো খবর পাবো। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, এ বিষয়ে এক্সপার্টদের মতামত নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।





