ফতুল্লায় ব্যবসায়ীর গার্মেন্ট পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন বিএনপি নেতা রিয়াদ, অডিও ফাঁস

0
ফতুল্লায় ব্যবসায়ীর গার্মেন্ট পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিলেন বিএনপি নেতা রিয়াদ, অডিও ফাঁস

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী একটি গার্মেন্ট ও ডাইং কারখানা পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। এমনকি ওই নেতা হুমকি দিয়ে কারখানা মালিককে শাসিয়েছেন। মঙ্গলবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় এই বিএনপির নেতার অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

জানা গেছে, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী ফোনে আজাদ প্লাজা গার্মেন্ট অ্যান্ড ডাইং কারখানার মালিক আজাদ হোসেনকে হুমকি দেন। সেই অভিও রেকর্ডে শোনা যায়, ওই গার্মেন্ট ও ডাইং কারখানার মালিককে উদ্দেশ্য করে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী ফোনে বলেন, ‘আপনি ফ্যাক্টরি খুলছেন কেন। ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরিয়ে দেব।

আপনি তো শেখ হাসিনার কি হন? গুন্ডামি করলেন কয়দিন ধরে। আমি ওই সময় শুধু রানার জন্য আগুন ধরাতে দেই নাই। ফতুল্লায় কত ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরছে আপনারা তো দেখছেন। আপনি ফ্যাক্টরি খুললেন কেন? এর প্রতিউত্তরে আজাদ প্লাজার গার্মেন্ট অ্যান্ড ডাইং কারখানার মালিক আজাদ হোসেন বলেন, হে বাবা, কি করতে হবে বইলো। তুমি যেভাবে বলবে সেভাবে করবো। আমি কী তোমার কথার বাইরে গেছি বলো। রিয়াদ চৌধুরী আরও বলেন, আপনি টাকা তো কবরে নিয়ে যাবেন। আপনেরে টাকা সহ কবরে দিয়ে দেব।

আপনি এখন আসেন। আপনি এখন আসবেন নাকি ফ্যাক্টরিতে আগুন ধরিয়ে দেব। এর প্রতি উত্তরে ফ্যাক্টরি মালিক আজাদ হোসেন বলেন, আচ্ছা আমি তোমার সাথে সাক্ষাৎ করবো। রিয়াদ হুমকি দিয়ে বলেন, আপনি আমাকে বলেন কখন সাক্ষাৎ করবেন? আপনি দেখা করবেন কি করবেন না বলেন? কখন কবে দেখা করবেন সেটা বলেন। কালকে রাতে যদি আগুন দিয়ে ফ্যাক্টরী পুড়ে ফেলে তখন বসে থাকতে পারতেন।

দুই-চারটা বাড়ি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে আগে আগুন ধরায় নাই। ধরছে কিনা বলেন? শহীদ সাহেবের মত ও সেলিম ওসমানের ফ্যাক্টরীতে আগুন ধরছে। আর আপনি তো শামীম ওসমানের ছোট ভাই। আপনি আওয়ামী লীগার মানে আপনি তো বড় আওয়ামী লীগার। আপনি গুন্ডা পালেন মিয়া। আজকে বুধবার, আপনি কি বারে দেখা করবেন। এরপর সামনের বুধবার পর্যন্ত দেখবো, তারপর কি করতে হয় করবো।

এর প্রতিউত্তরে অনুনয় বিনয় করে তিনি ফ্যাক্টরিতে আগুন না ধরাতে অনুরোধ করেন এবং ফ্যাক্টরি বন্ধ না করতে অনুরোধ করেন। ফ্যাক্টরি মালিক আজাদ হোসেন বলেন, বাজান তুমি আমার বাপ লাগো। আমি তোমার উপর নির্ভর করে আছি। তুমি বাবা একটু হেল্প করো। অডিও রেকর্ডের বিষয়ে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরে ৫ আগস্ট থেকে নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লায় অনেক প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ে ফোনে এ হুমকি দিয়েছে বিএনপি নেতা রিয়াদ চৌধুরী।

তবে ভয়ে এই গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির মালিক এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করেনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী আজাদ ডাইয়ের মালিক আজাদ হোসেন বলেন, গত ৫ আগস্টের পরে এখানে অনেক কিছু হয়েছে। যে যাকে যেভাবে পারছে অনেক কিছু করছে। এ বিষয়ে আর কিছু মন্তব্য করতে চাইনা। আমি তোমাকে অনুরোধ করলাম তুমি এই বিষয়ে কিছু কইরো না।

অভিযোগের বিষয়ে জানাতে চাইলে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভূইয়া বলেন, সে ৫ আগস্ট রাত থেকে নানা বিতর্কিত কাজ করছে। অনেককে ধরে নিয়ে চাঁদা আদায় করেছে। অনেকের কোম্পানির রড জোর করে নিয়ে গেছে। অনেকের ফ্যাক্টরি আগুন নিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমি দলের সিনিয়রদের সম্মতিক্রমে বহিষ্কার করি। পরে ফতুল্লা থানার বিএনপির সভাপতি টিটু সংবাদ সম্মেলন করে বহিষ্কার আদেশ বাতিল করেন। তিনি আরও বলেন, অনেক ব্যবসায়ী তার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছে পুলিশ সুপার বরাবর। সেসব অভিযোগের কপি আমার কাছে আছে। রিয়াদ চৌধুরী ও টিটু মিলে মামলা বাণিজ্য করে আমাদের দলের অনেক নেতাকর্মীকে ফাসিয়েছেন ও হয়রানি করেছেন। তার এসব অপকর্মের বিষয়ে লিখিতভাবে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরী ও ফতুল্লার মীর সোহেলের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে। তাদের ক্যাডার বাহিনী রিয়াদ চৌধুরীর জন্য কাজ করছে। বিএনপির লোকজন তার কাছে ভিড়তে পারে না। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, এ বিষয়ে আপনাদের কাছ থেকে শুনলাম। যাচাই বাছাই করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন ব্যক্তির দায় দল নেবে না। কেউ কোন অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ ব্যক্তির চেয়ে দল অনেক বড়।

 
 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here