রূপগঞ্জে গাজী কারখানায় নিখোঁজ ১৮২ জন ‘বেঁচে আছে’, দাবি স্বজনদের

0
রূপগঞ্জে গাজী কারখানায় নিখোঁজ ১৮২ জন ‘বেঁচে আছে’, দাবি স্বজনদের

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ নিজস্ব সংবাদদাতা: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ১৮২ জন নিখোঁজ রয়েছে। সেই ঘটনার দীর্ঘ ৫ মাস পর চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে স্বজনরা। নিখোঁজের স্বজনদের দাবি, নিখোঁজরা সবাই বেঁচে আছে। অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে নিখোঁজদের সবাই বেঁচে আছে বলে জানিয়েছে এবং খুব দ্রুত তারা ফিরে আসবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এই ঘটনায় স্বজনদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছে তারা।

রবিবার (২ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে তারা বিক্ষোভ করে। নিখোঁজ আমানুল্লাহর মা রাশিদা বেগম বলেন, আমার ছেলে আমানুল্লাহ তার বন্ধু নাহিদকে সাথে নিয়ে ওই দিন গাজী কারখানা দেখতে গিয়েছিল। সেই আর ফিরে আসেনি। তবে আমার ছেলে সহ নিখোঁজ সবাই বেঁচে আছে। ফোন করে এক ব্যক্তি সে তথ্য জানিয়েছে। আমার ছেলের আকার ও গায়ের রং বলেছে। ফোনে আমার ছেলের কান্নার শব্দ পেয়েছি।

কোন একটি বাহিনীর লোকজন তাদের আটকে রেখেছে। তবে কেন এবং কোথায় তাদের রাখা হয়েছে তা জানা নেই। পুলিশ এখন সেই ফোন নম্বর ট্রাক করলেই আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।  এ বিষয়ে পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি। ছেলের সন্ধান পেতে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছি। অগ্নিকাণ্ডের রাতের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের রাতে একটি গাড়িতে করে অনেক লোকজনকে অসুস্থতার কথা বলে কিছু লোক নিয়ে গেছে।

তবে বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে কারও সন্ধান পাইনি। ধারণা করছি, সেই গাড়িতে করে আমার সন্তান সহ নিখোঁজদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অজ্ঞাত ব্যক্তির ফোন আসে নিখোঁজ শাহাদাত শিকদার ও সাব্বির শিকদারের বোন সিনথিয়া আক্তারের কাছে। তিনি বলেন, আমার দুই ভাই সহ তিনজন এই ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন। তবে এই ঘটনার পর থেকে প্রায় দুই মাস পর্যন্ত আমার বড় ভাই শাহাদাত শিকদারের ফোন নম্বরের রিং বেজেছে।  নিখোঁজ হওয়ার ৮দিন পরে থেকে একটি নম্বর থেকে আমার কাছে ফোন আসে। ফোনের ওই ব্যক্তি জানিয়েছে আগামী রমজানের আগে সবাইকে ছেড়ে দেবে।

একটি বাহিনীর লোকজন গাজী কারখানার পেছনের গেট দিয়ে তাদেরকে কোন এক স্থানে নিয়ে গেছে। ফোনের ওই ব্যক্তি সব সময় আমাদের বলে আসছে, আপনারা চিন্তা কইরেন না। তারা সবাই চলে আসবে। ২২২ জন জন লোক তাদের হেফাজতে রয়েছে বলে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন । তবে ওই ব্যক্তি তার নাম-পরিচয় কখনো দেয়নি। ক্ষোভ প্রকাশ করে নিখোঁজ রাকিবের বাবা ও মাসুদের চাচা মজিবুর রহমান বলেন, ‘গাজী কারখানার নিরাপত্তাকর্মী সহ আরও অনেকে আমাদের জানিয়েছে একটি বাহিনীর লোকজন হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলে তাদের নিয়ে গেছে।

সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে পাপ্পা গাজীর নির্দেশে তার লোকজন এই লোকগুলোকে গুম করে নিয়ে গেছে। বিগত ৫ মাস ধরে তাদের সন্ধান পাচ্ছিনা। এই ঘটনায় থানায় গেলেও পুলিশ জিডি নেয়নি। সম্প্রতি অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে আমাদের জানিয়েছে, নিখোঁজ সবাই জীবিত আছে। এছাড়া নানা তথ্য দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হুসাইন বলেন,একটি নম্বর থেকে নিখোঁজের স্বজনদের কাছে ফোন এসেছে। তাদের দাবি, তাদের সন্তান জীবিত রয়েছে। স্বজনদের বক্তব্য রেকর্ড করেছি।

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। তারা দেখভাল করছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন করা দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১৮২ জনের নিখোঁজের তালিকা করা হয়েছে।নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে। আর অজ্ঞাত নম্বর ফোন আসার বিষয়ে টেকনোলজি ব্যবহার করে জানতে পেরেছি ওই নম্বরটি বন্ধ ছিল। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, গত বছরের ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ভবনটিতে ২১ ঘন্টা ধরে আগুন জ্বলার ফলে ঝুকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফলে ভবনের ভেতরে উদ্ধার অভিযান চালায়নি কর্তৃপক্ষ। তবে ১৫ খন্ড হাড় পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় গত ১২ সেপ্টেম্বর গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি।

প্রসঙ্গত, নিখোঁজের সন্ধান চেয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে নিহতের স্বজনরা। একই দাবিতে ৮ জানুয়ারী দুপুরে রূপগঞ্জ থানায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে স্বজনরা।

 
 
 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here