প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলপ্ত করায় সিদ্ধিরগঞ্জে বইছে খুশির বন্যা। আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এলাকায় তৈরি হয়েছে ঈদের মত পরিবেশ।
ত্যাগীদের বঞ্চিত করে বহুল বিতর্কিত সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন সভাপতি ও গোলাম ফারুক খোকনকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করার পর থেকেই দলের সিংহভাগ নিতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছিল ক্ষোভ।নারায়ণগঞ্জ জেলা বিষয়ক তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মঙ্গলবার(২৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বিলুপ্তির খবর ছড়িয়ে পরার পরই বিএনপি নেতাকর্মীরা উল্লাসে মেতে উঠেন।
দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বের করা হয় আনন্দ মিছিল। মিষ্টি বিতরণে ব্যস্থ হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে আহ্বায়ক ও গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্যসচিব করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। পরে গিয়াস উদ্দিন দলের ত্যাগী জনপ্রিয় নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে তার অনুগত লোকদের নিয়ে ২০২৩ সালের ১৭ জুন সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিলে কঠোর নিরাপত্তায় নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্মেলন করে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করেন।
কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন। বিতর্কিত ওই কমিটি গঠনের পর থেকেই বিএনপি দুভাগে বিভত্ত হয়ে পড়ে। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ,বিগত ১৫ বছর গিয়াস উদ্দিন ও তার অনুতগরা গর্তে লুকিয়ে ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই গিয়াস উদ্দিন ও তার অনুসারীরা বিএনপির দাপটি নেতা সেজে যায়। লুটপাট, চাঁদাবাজি, মার্কেট,শিল্প কারখানা,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল ও জুলাই-আগস্ট হত্যা কাণ্ডের ঘটনাকে পুঁজি করে মামলা বাণিজ্য করে তারা দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করেছে।
এসব মামলায় অনেক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের করেছে আসামি। বাদ যায়নি সংবাদ কর্মীরাও। এতে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। ৫আগস্টের পর গিয়াস উদ্দিনের ছেলে রিফাত ও ফয়সাল বনে যান সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার শাসক। আদমজী ইপিজেডসহ থানা এলাকার বিভিন্ন ছোটবড় শিল্প কারখানার ব্যবসা দখলে নেন। গিয়াস উদ্দিনের ঘনিষ্ট বিএনপি
নেতারা হয়ে যান সিদ্ধিরগঞ্জের বিচারপতি। মিনি আদালত হয়ে উঠে তাদের বাসা ও অফিস। তাদের খবরদারি থেকে বাদ যায়নি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক বিএনপি নেতা জানান, ৫ অগস্টের পর গিয়াস উদ্দিনের শেল্টারে তার ঘনিষ্টজনরা যেসব অন্যায় অপকর্ম করেছে তা দলের হাইকমাণ্ডকে জানানো হয়। তদন্ত করে এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে হাইকমাণ্ড।বিএনপি নেতারা জানান, ছাত্রজীবন থেকেই গিয়াস উদ্দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। সর্বশেষ তিনি কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি।
তাই আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে একেবারে শেষ সময়ে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে ২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি নির্বাচিত হয় গিয়াস উদ্দিন। তিনি এমপি হয়েই শুরু করেন বিএনপি নিধন। বহু বিএনপি নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছেন। গিয়াস উদ্দিন এমপি থাকতে তার আস্তাভজন লোকছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সবচেয়ে দুর্দিন গেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের।
একক অধিপত্য বিস্তার করতে গিয়াস উদ্দিন বিএনপি নেতাকর্মীদের যে অত্যাচার নির্যাতন করেছে তা গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও হয়নি। তাই গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্ব মেনে নিতে চায়না বিএনপির বড় অংশের নেতাকর্মীরা। গিয়াস উদ্দিন এমপি থাকতে শীতলক্ষ্যার তীরে পাথর বালু মহল ও চুনা শিল্পে চাঁদাবাজির যে উৎসব চলছিল তা আর বিএনপি নেতারা দেখতে চায়না।