বন্যার পর কারফিউ নিঃস্ব সিলেটের মানুষ – মারাত্মক কষ্টে দিনমজুররা

0
বন্যার পর কারফিউ নিঃস্ব সিলেটের মানুষ – মারাত্মক কষ্টে দিনমজুররা

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ জেলা সংবাদদাতা: তিন দফা বন্যায় নিঃস্ব সিলেটের মানুষ। এরপর এ মাসের শুরুতেই শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করে। টানা পাঁচ দিনের কারফিউয়ে স্থবির হয়ে পড়ে সিলেটের জনজীবন। চরম বিপাকে পড়েছেন দিনমজুরেরা।

অর্থকষ্টে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও। সিলেটের বন্দর বাজার, শিবগঞ্জ, আম্বরখানা, মদীনা মার্কেট, শাহী ইদগাহ, মিরাবাজার, টিলাগড়, মেজরটিলা ঘুরে দেখা যায়, কারফিউ শিথিল হলেও শ্রমিকরা বিভিন্ন পয়েন্টে অলস বসে আছেন।তারা বলছেন, দেশে আন্দোলন থাকায় তাদের কেউ কাজে নিতে চায় না। কাজ না থাকায় খুব কষ্টে সময় যাচ্ছে। টাকা না থাকায় অনেক পরিবারে চুলা জ্বলছে না। কিছু পরিবার খেতে পেলেও আধ পেটে থাকতে হচ্ছে অনেককে।

গতকাল বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে নগরীর বন্দরবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় অর্ধশত দিনমজুর বসে আছেন। কারও হাতে কোদাল, কেউবা টুকরিতে মাথা রেখে ঝিমাচ্ছেন। কিছু আছেন চায়ের দোকানের পাশে। কাছেই বসে ছিলেন কয়েকজন নারী শ্রমিক। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার কারণে তাদের মধ্যে ঠিকমতো চোখের পাতাই খুলতে পারছিলেন না মন্দিরা দেবী। অন্য নারী শ্রমিক লিমা খাতুনের কাঁধে ভর দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন তিনি।

লিমা জানান, গত শনিবার থেকে তাদের কোনো কাজ নেই। লোকজন তাদের নিতে আসে না। প্রতিদিন বসে থেকে থেকে খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। তার স্বামী রমিজ মিয়া একদিন কাজ করে কিছু চাল নিয়ে গিয়েছিলেন, সেগুলোতেই চলছে।এই কথোপকথনের পর যোগ দেন হাজেরা বেগম, মুসলিমা বেগম, তাহেরা বানু, আনোয়ারাসহ বেশ কয়েকজন। তারা সবাই একযোগে জানান, তারা থাকেন নগরীর মিরাবাজার ও কুশীঘাট এলাকায়। কয়েকদিন আগের বন্যায় ছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

বন্যা কমার পর ঘরে গেলেও শান্তি নেই। বাসার মালিক ঘর ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। ঘরে তেমন খাবারও নেই। অথচ গত ৫ দিন ধরে তাদের কোনো কাজ নেই। তেররতন এলাকার খোরশেদা বেগম জানান, বন্যার কারণে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এখন কারফিউর কারণে সেই কষ্ট সীমা ছাড়িয়েছে। বাসার পাশের দোকানে বাকি হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ টাকা। এখন দোকানদারও বাকি দিতে চান না।

তিনি আরও জানান, একবেলা কামলা খাটলে ৬০০ টাকা মেলে। বেলা ১১টা পর্যন্ত কেউ নিতে আসেনি। যারা কাজে নিতে আসার কথা, তাদের নির্মাণকাজও বন্ধ।পাশে বসেই চা পান করছিলেন আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, গত কয়েক দিনে শুধু চা দোকানের বাকি হয়েছে ৩০০ টাকা। শুধু বাকির ওপর আছি। জানি না এই অবস্থার কবে উন্নতি হবে।

এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। পাশেই চা দোকানদার আলী মিয়া জানান, প্রতিদিন সকালে তিনি বন্দরবাজারে চা বিক্রি করেন। গত কয়েক দিন ধরে তাদের তিনি বাকিতে চা পান করাচ্ছেন। যারা নগদে খায় তাদেরটা দিয়ে নিজেই কোনোরকম চলছেন। জানা গেছে, কারফিউর কারণে বাসাবাড়ি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ বন্ধ। লোকজনের হাতে টাকা-পয়সাও নেই। এমন অবস্থায় মারাত্মক কষ্টে দিন পার করছেন দিনমজুররা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here