প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ মহেশপুর (ঝিনাইদহ)সংবাদদাতাঃ ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্ত বর্তী শ্যামকুড় ইউনিয়নের ভবনগর গ্রাম। এই গ্রামের বনাঞ্চলে রয়েছে প্রায় দুই শতাধীক কালোমুখো বিরল প্রজাতির হনুমান। এই গ্রামের মানুষের সঙ্গে এদের রয়েছে সখ্যতা। ঠিক কতদিন ধরে হনুমান গুলো এখানে বসবাস করে তা এই গ্রামের মানুষের জানাও নেই।
তবে এলাকার প্রবীনরা মনে করেন বিট্রিশ আমল থেকেই এরা এই গ্রামে দলবন্ধ ভাবে বসবাস করে আসছে। এদের মধ্যে বয়োবৃন্ধ,শিশু ও মধ্য বয়সী হনুমান রয়েছে। যদিও এর আগে এখানে হনুমানের সংখ্যা কম ছিলো। দিন যত যাচ্ছে এখানে হনুমানের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। এরা দিনের বেলায় একই সাথে কিংবা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে শ্যামকুড় মাঠপাড়া,স্বরুপপুর ও শ্রীনাথপুর গ্রামের মাঠে মাঠে খাবারের সন্ধ্যানে ঘুরে বেড়ালেও রাত হলে তারা আবারও ফিরে আসে তাদের ভবনগর গ্রামে।
তবে খাবারের সন্ধানে ফসলের ক্ষতিও করে এসব হনুমান গুলো। কেউ কেউ বিষয়টি মানবিক দৃষ্ঠিতে দেখলেও আবার কেউ কেউ হনুমাদের পিটিয়ে আহত পর্যন্ত করে থাকে। বন অধিদপ্তরের একটি সুত্রে জানাগেছে, ২০২০ সাল থেকে বন অধিদপ্তরের সিসিএফ আমির হোসেন চৌধুরীর প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে প্রতিদিন এসব হনুমানদের খাবারের জন্য ১৬ কেজি কলা,২ কেজি বাদাম, কেজি পাউরুটি (৫০ পিট) ও সবজি ২ কেজি বরাদ্ধ করা হয়েছে।
আর এ সব খাবার হনুমানদের খুজে খুজে দিয়ে বেড়ান ভবনগর গ্রামের নাজমু হাসান নামের এক যুবক। নাজমুলের ডাক চিৎকার শুনলেই কালো মুখো হনুমান গুলো লাফাতে লাফাতে ছুটে আসে তার কাছে। তারা নাজমুলের হাত থেকে খাবার খায় অনেকটাই নির্ভয়ে।ভবনগর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যে সামান্য পরিমানের ২০০টি হনুমানের খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে তাদের ক্ষুধা মেটেনা। সব সময়ই ক্ষুধায় কাতর থাকে হনুমান গুলো।
তাছাড়া আগের তুলনায় হনুমান বেড়ে যাওয়ায় তাদের খাদ্য সংকট আরো বেশি দেখা দিয়েছে। যে কারনে এদের রক্ষায় ও অভয়ারণ্য তৈরীর ব্যাপারে সরকারী ভাবে উদ্যোগ নেওয়াটা জরুরী হয়ে পড়েছে। হনুমান প্রেমী ও হনুমানদের দেখভালকারী নাজমুল হাসান জানান, বন অধিদপ্তর থেকে যে পরিমানের খাবার দেওয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামন্য। যে কারনে খাবারের সন্ধানে এরা এদিক সেদিক ছোটা ছুটি করে মানুষের ফসল নষ্ট করছে।
এছাড়াও এলাকার বন জঙ্গল কমে যাওয়ায় এরা লোকালয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এদের নিরাপদ থাকার জায়গা ও খাবার পরিমান মত জরুরী হয়ে পরেছে। ভবনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিকাইল হোসেন জানান, দিন দিন এলাকায় বড় বড় গাছ গুলো কমে যাওয়ার কারনে তাদের থাকার সমস্য হচ্ছে। আবার তাদের যে পরিমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে তাও সামান্য।তিনি আরো জানান, হনুমান গুলো খাবারের কারনেই লোকালয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষের ফসলসহ সবত ঘরেরও ক্ষতি করছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পনিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আমাদের এলাকার বড় বড় গাছ গুলো রক্ষা করতে হবে আগে। বড় বড় গাছ গুলো নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের এলাকার হনুমান গুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আতিবুর রহমান জানান, হনুমান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এদের মারা ও নিধন করা দন্ডনীয় অপরাধ। এই প্রাণীটি মানুষের সাথে মিলে মিশে থাকতে পছন্দ করে। অন্য প্রণী থেকে এদের রোগ বালায়ও কম হয়।
এদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।মহেশপুর ও কোটচাঁদপুরের বন বিভাগের দায়িন্তপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, এসব হনুমানের উপর আমরা রিপোট করিয়ে খাবারের বরাদ্ধা করা হয়েছিলো। এরা সব সময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যার করনে কনো সময় তারা বেশী থাকে আবার কোন সময় তারা সংখ্যায় কম থাকে।
তিনি আরো জানান, হনুমান গুলোর রক্ষানাবেক্ষনে জন্য অভয়ারণ্যে তৈরীর খুবই প্রয়োজন।মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন মনিরা জানান, হনুমানযে ভবনগর গ্রামে বসবাস করে বিষয়টি আমার জানা ছিলোনা। আমি বিষয়টি যেনে কি করা যায় দেখবো।