প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় পুরো শক্তি নিয়ে আঘাত করেছে। এছাড়া দেশের মধ্যভাগেও তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। প্রায় ৭ ঘণ্টা ব্যাপী প্রচণ্ড শক্তির ঘূর্ণিঝড়ে প্লাবিত এবং তছনছ হয়ে গেছে বহু জনপদ, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ,গাছপালা, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত, দোকানপাট, বাতিল হয়েছে বিমানের বহু ফ্লাইট।
মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল পর্যন্ত রাজধানীসহ সাত জেলায় প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত ১৬ জনের। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৯ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১০৭টি উপজেলার সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষ। পৌনে ৩ কোটি গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ছেদ পড়েছে। ১৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি।
এছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম, ফেনী, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। রিমালের আঘাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছে ঢকায় ৪, ভোলায় ৩, বরিশালে ৩, পটুয়াখালীতে ২, খুলনা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে মোট ১২ জন।
রিমালের প্রভাবে রাজধানীতে বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আলাদা ঘটনায় নারীসহ চার জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।মৃতরা হলেন: খিলগাঁও রিয়াজবাগ এলাকার রিকশার গ্যারেজে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া রাকিব (২৫), খিলগাঁও সিপাহীবাগে রাস্তায় জমে থাকা পানির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া মরিয়ম বেগম (৪৫), যাত্রাবাড়ীতে টিনের প্রাচীর স্পর্শ করে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া লিজা আক্তার (১৬) ও অপরজন বাড্ডার বাসিন্দা। তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভোলায় বসতঘরে গাছ পড়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউম্মেদ ইউনিয়নে তীব্র বাতাসে টিনের ঘরে গাছ পড়ে মনেজা (৫৪) নামে একজনের মৃত্যু হয়। গাছের ডাল পড়ে জেলার বোরহানউদ্দিনে সাচড়া ৬নং ওয়ার্ডে জাহাঙ্গীর (৫০) নামে আরেকজন ও দৌলতখান পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে বসতঘরে গাছ পড়ে মাইশা নামের ৪ বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকত মোড়ল (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
পটুয়াখালীতে জোয়ারের পানিতে ডুবে মো. শরীফ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়।এছাড়া বাউফলে ঘরের নিচে চাপা পড়ে করিম খান (৬২) নিহত হয়েছেন। বরিশালে রেমালের প্রভাবে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি বিল্ডিংয়ের ৩য় তলার দেয়াল ধসে লোকমান হোটেলের মালিকসহ ২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- লোকমান (৫৫) ও মোকলেস (২৫)। এ ছাড়া জালাল সিকদার নামের আরও একজন নিহত হয়েছেন।
কুমিল্লা নগরীতে নির্মাণাধীন একটি ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম সাগর (১২) নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে এক যুবক মারা গেছেন। নিহত যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬)। খুলনায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে ঘরের উপর গাছ উপড়ে পড়ে লালচাঁদ মোড়ল (৩৬) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎহীন পৌনে ৩ কোটি গ্রাহক
ঘূর্ণিঝড় রিমালে পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকোর ২ কোটি ৭০ লাখ ৩১ হাজার ৯৩১ জন গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থারও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।এর মধ্যে কেবল পল্লী বিদ্যুতেরই ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ জন গ্রাহক আছেন বলে সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ বিভাগের বার্তায় জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ২ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৫০ জন গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮১ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রাথমিকভাবে ৯১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি বিদ্যুৎ অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।