রাজধানীর ১০টি এলাকা করোনা সংক্রমণের ‘হটস্পট’

0
রাজধানীর ১০টি এলাকা করোনা সংক্রমণের ‘হটস্পট’

প্রেসনিউজ২৪ডটকমঃ রাজধানীতে প্রথম করোনা রোগী ছিল বাসা-মিরপুর। কয়েক দিনে বাসা-মিরপুর-উত্তরা হয়ে ওঠে হটস্পট। কিন্তু সংক্রমণ যখন বাড়তে থাকে তখন রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে করোনা।এখন করোনা ছড়িয়ে রাজধানীর সবগুলো এলাকাতে। কিন্তু প্রথম দিকেনর হটস্পট ছাড়িয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে রাজধানীর ১০টি এলাকা। এই এলাকাগুলোতে অর্ধ এবং শতাধিক রোগা শনাক্ত হয়েছে।

এই এলাকাগুলোতে এখন রোনা ভাইরাসের সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার সপ্তম থেকে নবম সপ্তাহে ঢাকায় রোগী প্রায় তিনগুণ হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় সাড়ে ১১ গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৫ এপ্রিল ছিল সংক্রমণের সপ্তম সপ্তাহের শেষদিন। ওইদিন পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটিতে শনাক্তের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২২৮ জন। গত শনিবার (৯ মে) সংক্রমণের নবম সপ্তাহের শেষদিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬ হাজার ১৬২ জন, যা দেশে মোট আক্রান্তের ৫৮ দশমিক ১৪ শতাংশ (৯ মে পর্যন্ত)। দুই সপ্তাহ আগে এই হার ছিল ৫১ দশমিক ৫০ ভাগ।

এরই মধ্যে রাজধানীর ১০টি এলাকাকে সংক্রমণের ‘হটস্পট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এগুলো হলো- রাজারবাগ, কাকরাইল, যাত্রাবাড়ী, মুগদা, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, লালবাগ, তেজগাঁও, বাবুবাজার ও মালিবাগ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এমন কিছু এলাকা রয়েছে যেখানে কয়েকদিন আগেও শনাক্ত ছিল না, এখন প্রতিদিনই আক্রান্ত বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন কঠোরভাবে না মানলে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানো যাবে না।

তিনি আরও জানান, রাজধানীর যেসব এলাকায় কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে, সংশ্নিষ্ট থানায় সেসব রোগীর তথ্য সরবরাহ করা হয়। যাতে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্নিষ্ট বাড়ি বা গলি লকডাউন করে বিস্তার রোধ করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মানুষ অকারণে বেরিয়ে আসছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে।

আইইডিসিআরের তথ্য মতে, অষ্টম ও নবম সপ্তাহে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি মানিকনগরে। ২৫ এপ্রিল শনাক্ত ছিল মাত্র ২ জন, যা ৯ মে-তে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ জনে। ফার্মগেটেও ৩ থেকে বেড়ে ৩২ জন হয়েছে। মালিবাগে ১০ থেকে ৮৩, বাবুবাজারে ১১ থেকে ৭৯, কাকরাইলে ২৭ থেকে ১৭৩, শ্যামলীতে ৯ থেকে ৫৪, কামরাঙ্গীরচরে ৭ থেকে ৪১, গোপীবাগে ৬ থেকে ২৯, মহাখালীতে ৩৪ থেকে ১৫৯, আগারগাঁওয়ে ১১ থেকে ৪৭, বাড্ডায় ১৪ থেকে ৫৭, খিলগাঁওয়ে ১৯ থেকে ৬৪, মগবাজারে ২০ থেকে ৬৮, মুগদায় ৪১ থেকে ১৫৬, রামপুরায় ১২ থেকে ৪৩, রমনায় ৭ থেকে ৩৯, তেজগাঁওয়ে ৩৩ থেকে ১০১ জন। এ ছাড়া সপ্তম সপ্তাহে রোগী ছিল না মান্ডা ও নয়াপল্টনে, নবম সপ্তাহে এখানে রোগী যথাক্রমে ২৬ ও ৩২ জন।

গতি কিছুটা কম হলেও প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে মোহাম্মদপুর, রাজারবাগ, ধানমন্ডি, উত্তরা, লালবাগ, বংশাল, যাত্রাবাড়ীতে। সেদিক থেকে মিরপুরের এলাকাগুলোতে লাগাম টেনে ধরা কিছুটা সম্ভব হয়েছে।

টোলারবাগ ৩১ দিন করোনা শূন্য
রাজধানীর টোলারবাগে টানা ৩১ দিন একজন রোগীও শনাক্ত হয়নি। সর্বশেষ গত ১০ এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে শনাক্ত হয়েছিল ১৯ জন। এরপর ধাপে ধাপে শতাধিক ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হলেও কারও শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি এবং লকডাউনের কঠোর নির্দেশনা মেনে চলার সুফল পেয়েছেন তারা। মার্চের শেষ দিকে মিরপুরের এই আবাসিক এলাকায় দুই বাসিন্দার মৃত্যুতে পুরো দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

হঠাৎ ‘হটস্পট’ কাকরাইল
প্রথম দিকে রাজধানীর কাকরাইলে করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। গত ২২ এপ্রিল পর্যন্ত কাকরাইলে প্রথম দুইজন শনাক্ত হয়েছিল। এটি এখন হয়ে উঠেছে রাজধানীর তৃতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমিত এলাকা। ৯ মে পর্যন্ত এখানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৭৩ জন। আইইডিসিআরের তথ্যে দেখা যায়, ২৪ এপ্রিল একদিনেই শনাক্ত হন ২৫ জন রোগী। ২৭ এপ্রিল রোগী ছিল ৪৪ জন। ২৯ এপ্রিল বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪ জন। ৩০ এপ্রিল এক লাফে ১৩৫ জন।

তবে কাকরাইলে এত রোগীর খোঁজ মিলছে না বলে জানিয়েছেন রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত রোগীর নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়। কিন্তু পুরো রমনা থানা এলাকা মিলিয়েও এত সংখ্যক রোগীর তালিকা নেই।

পুরান ঢাকায় বেড়েছে তিনগুণের বেশি
প্রথম দিকে করোনা রোগী শূন্য ছিল পুরান ঢাকায়। কিন্তু মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে  সেখানে রোগী বেড়েছে তিনগুণের বেশি। ২৫ এপ্রিল এখানে মোট শনাক্ত ছিল ৪৯৭ জন। ৯ মে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫০৫ জনে। পুরান ঢাকায় করোনার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছে লালবাগ, বংশাল, বাবুবাজার, গেণ্ডারিয়া, স্বামীবাগ, চকবারাজার ও হাজারীবাগ।

লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, করোনা রোগী শনাক্ত হলেই বাড়ি বা গলি লকডাউন করে সংক্রমণের বিস্তার রোধ করার চেষ্টা চলে। তবে মানুষকে আটকানো সম্ভব হচ্ছে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here